আজকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে খুব ভাল একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো । আপনাকে ধৈর্য্য ধরে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং মানে হচ্ছে মুক্তপেশা বা স্বাধীন পেশা । কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ না করে স্বাধীনভাবে কাজ করাই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং । যিনি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার ।

প্রকৃতপক্ষে, একজন রিকশাচলক, প্রাইভেট শিক্ষক, দোকানদার – তারাও ফ্রিল্যান্সার । কারণ, তারা তাদের কর্মক্ষেত্র স্বাধীন । ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে কাজের ধরণ, এটা কোন পেশার নাম নয় । মনে করুন, আপনি শিক্ষকতা করতে চান । এ কাজটি ২ ভাবে করতে পারেন:- ১। কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, ২। স্বাধীনভাবে প্রাইভেট পড়ানো – এটাই ফ্রিল্যান্সিং । একেকজন একেক কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন । তবে, এখানে ফ্রিল্যান্সিং বলতে আমরা ইন্টারনেট থেকে স্বাধীনভাবে অর্থ উপার্জন বোঝাবো ।

ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে নির্দিষ্ট সেক্টরে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ইংরেজি জানতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কতটুকু জানতে হবে? – যতটুকু জানলে কমুনিকেশন করা যায় । অর্থাৎ, আপনার ক্লায়েন্টের কথা বুঝার সক্ষমতা থাকতে হবে এবং তাকে বোঝানোর সক্ষমতা থাকতে হবে । ভয় পাবেন না, প্রাথমিক অবস্থায় আপনাকে ক্লায়েন্টের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে হবেনা । শুধু ম্যাসেজের মাধ্যমে কমুনিকেশন জানলেই হল । তাই নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ইংরেজি শেখা শুরু করুন যদি আপনার ইংরেজিতে দক্ষতা কম থাকে । অন্যথায়, কাজ শেখার পরও মার্কেটপ্লেস এ গিয়ে হতাশ হতে হবে ।

ইংরেজি শেখার জন্য ভোকাবুলারি শেখার গুরুত্ব অপরিহার্য । কমন ভোকাবুলারী অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত শব্দগুল‌ো শিখতে ফেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে, Play Store এ গিয়ে Common Vocabulary লিখে সার্চ দিন অথবা এখান ক্লিক করুন ।

আউটসোর্সিং মানে হচ্ছে নিজের কাজ কাউকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া । অর্থাৎ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের দ্বারা নিজের কাজ করিয়ে নেওয়ায় হচ্ছে আউটসোর্সিং ।

একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করি । মনে করুন, আরিফের একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন । সে জানে না কিভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয় কিংবা সে নিজের কাজ নিজে করতে আগ্রহী নয় । তাই, সে চিন্তা করলো সে কাউকে দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করাবেন । তারপর, সে একটি ঘোষনা দিল যে, তার একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। রাকিব নামের একজন ব্যক্তি তার ওয়েবসাইটটি করে দিল । আরিফ ওয়েবসাইটটি বুঝে পাওয়ার পর রাকিবকে টাকা পরিশোধ করে দিল।

উপরের উদাহরণে, আরিফ আউটসোর্সিং করেছেন এবং রাকিব ফ্রিল্যান্সিং করেছেন ।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রসমূহ

ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করার প্রচুর সেক্টর রয়েছে । এখানে আমি কয়েকটি জনপ্রিয় সেক্টর নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি । কোন সেক্টর সম্পর্কে জানতে নামের উপর ক্লিক করুন ।

ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হলে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন।

কাজের ধরণ: ওয়েবসাইট তৈরি করা, ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ করা, ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড বাড়ানো, নতুন ফিচার সংযোজন করা, ডিজাইন পরিবর্তন করা, ওয়েবসাইটের সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদি ।

শিখতে হবে: এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, জেকুয়েরি, পিএইচপি, ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি ।

কাজের ধরণ: লোগো, ব্যানার, বিজনেজ কার্ড ইত্যাদি ডিজাইন করা ।

শিখতে হবে: এডোবি ফটোশপ, এডোবি ইলাস্ট্রেটর

মোবাইলের অ্যাপ তৈরি করার ইচ্ছা থাকলে আপনার জন্য অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার ।

কাজের ধরণ: অ্যাপ তৈরি করা, অ্যাপ মার্কেটপ্লেস এ সাবমিট করা, অ্যাপ এ নতুন ফিচার যুক্ত করা ইত্যাদি ।

শিখতে হবে: জাভা, এক্সএমএল

উপরের যেকোনো একটি বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করে আপনি ইন্টারনেট থেকে টাকা উপার্জন করতে পারবেন । উপরের কোন কাজটি ভাল লাগে সেটা প্রথমে নির্ধারণ করুন । নিজে নিজে শিখতে চাইলে আপনার পছন্দের সেক্টরে নিয়ে কাজ করেন – এমন ব্যক্তির সাহায্য নিন। অথবা, ইউটিউব / গুগল এ সার্চ করতে পারেন কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং করতে পারেন।

কেনটি সহজ? – এই ধরনের প্রশ্ন না করে আপনার কোন কাজ ভাল লাগে সে অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

কিছু ভুল ধারণা

  • আপনি যদি ভাবেন শুধু কম্পিউটার থাকলেই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়, ৭ দিনেই ফ্রিল্যান্সিং শেখা সম্ভব, কোর্স করলেই টাকা উপার্জন করতে পারবেন – তাহলে আপনি ভুল পথে আছেন । বরং, আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
  • কেউ মাসে ১ লাখ টাকা ইনকাম করে । তাই, আপনিও মাসে ১ লাখ টাকা ইনকাম করবেন – এটা ভুল ধারনা। আপনার ইনকাম নির্ভর করবে আপনার স্কিল (দক্ষতার) উপর ।

কিভাবে শুরু করবো?

আমি ধরে নিচ্ছি আপনি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারনা লাভ করেছেন । এখন আপনি শিখতে আগ্রহী । ফ্রিল্যান্সিং খুবই ধর্য্যের বিষয় । এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই বাছাই করতে হবে আপনি কোনটি শিখতে আগ্রহী? আমি ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাজের ক্যাটাগরি নিয়ে আলোনা করেছি । এবার আপনি পছন্দের কাজটি শেখা শুরু করুন । কাজ শেখার প্রচুর রিসোর্স রয়েছে।

  • ভিডিও টিউটোরিয়াল: আপনি যে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চান ঐ বিষয়ের উপর ইউটিউব এ প্রচুর ভিডিও পাবেন । যদি আপনি কোন কাজ শিখতে চান, সেই কাজ শেখার জন্য ইন্টারনেট এ প্রচুর টিউটোরিয়াল পাবেন।
  • অনলাইন ট্রেনিং: আপনার পক্ষে যদি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ট্রেনিং নেওয়া সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে অনলাইনে ট্রেনিং করতে পারেন।
  • প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং: আপনার পক্ষে যদি নিজে নিজে শেখা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ট্রেনিং নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং করার পূর্বে অবশ্যই খুব ভাল করে যাচাই করে নিবেন । এক্ষেত্রে, ট্রেইনারের দক্ষতা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সফলতা – এসব খুব ভাল করে বিশ্লেষণ করে নিবেন। ভুল প্রতিষ্ঠান বাছাই করলে শুধু আপনার টাকা-ই নষ্ট হবে না, আপনার শেখার আগ্রহও কমে যাবে ।

একটু কঠিন লাগলেই যদি হাল ছেড়ে দেন তাহলে আপনাকে দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং হবে না।

কিছু পরামর্শ

  • একদিন ৮ ঘণ্টা সময় দিলেন পরেরদিন কোন সময় দিলেন না – এভাবে শিখতে পারবেন না। এভাবে চলতে থাকলে, ৩য় দিন আপনি শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন । প্রতিদিন সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তবে হ্যা, আপনার যদি সারাদিন ই শিখতে ভাল লাগে – সেটা আরও ভাল ।
  • কারও কাছে সাহায্য নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে । বেশীরভাগ ফ্রিল্যান্সার ব্যস্ত থাকেন এবং আপনার মত অনেকেই তাদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। তাই, হাই, হ্যালো, বাড়ি কোথায় – এসব ম্যাসেজ না দিয়ে সরাসরি আপনার প্রশ্ন করবেন । ম্যাসেজ দেওয়ার পর অপেক্ষা করুন । আর যদি ফোন দেন সেক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি তাকে প্রশ্ন করুন আপনার সাথে কথা বলারমত সময় আছে কিনা । ফোন না রিসিভ করলে বার বার ফোন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • শেখার জন্য অতিরিক্ত বই / টিউটোরিয়াল / রিসোর্স সংগ্রহ করবেন না । অর্থাৎ, ধরুন আপনি কম্পিউটার শিখতে চাচ্ছেন । কম্পিউটার শেখার জন্য আপনি প্রচুর পরিমাণ বই সংগ্রহ করলেন। শেষে দেখবেন একটি বই ও ভালভাবে শেষ হবে না। ভাল টিউটোরিয়াল বাছাই করে -তা খুব ভালভাবে শেষ করুন। কম্পিউটারে কয়েক জিবি টিউটোরিয়াল থাকলেই আপনি দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন না। বরং, টিউটোরিয়াল শেষ করতে হবে।
  • মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য অস্থির হয়ে যাবেন না। আগে নিজেকে দক্ষ করে তুলুন । অল্প দক্ষতা অর্জন কিংবা দক্ষতা অর্জন না করেই মার্কেটপ্লেসে গিয়ে অযথা মার্কেটপ্লেসের পরিবেশ নষ্ট না করার অনুরোধ রইলো।

এছাড়াও যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং প্রশ্ন‌োত্তর পেইজ এ যান কিংবা আমাকে ফেইসবুকে প্রশ্ন করতে পারেন ।

আমাদের সম্পর্কে

প্রযুক্তিল্যাব ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। যদিও প্রযুক্তিল্যাব নতুন একটি নাম, আমরা ২০১৩ সাল থেকে প্রফেশনালভাবে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। সাম্প্রতিক আমরা গ্রাফিক্স ডিজাইন সেবাটি যুক্ত করেছি। গ্রাহকদের ন্যূনতম মূল্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ায় আমাদের মূল লক্ষ্য।